উত্তরবঙ্গ যেতে নিত্যসঙ্গী যানজট :  যন্ত্রণার আরেক নাম নলকা সেতু

194

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে হেলে-দুলে কচ্ছপ গতিতে চলা যানবাহনগুলো দেখে মনে হয়- এই বুঝি কাত হয়ে পড়ে গেলো। এঁকেবেঁকে চলে আসা এ গাড়িগুলো থেকে পথিকের মনেও জাগে শঙ্কা, কখন যেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ‘নলকা সেতু’ এলাকার দুর্ভোগ যেন এ পথের যাত্রীদের নিত্যসঙ্গী। এরপরও ঝুঁকি আর আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২৩ জেলার হাজার হাজার পরিবহন।

নলকা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একদিকে যেমন যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে অন্যদিকে সেতুটির ওপরের সংযোগস্থলগুলো ও রাস্তায় প্রায়ই মেরামত করা হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য দেখা যায়নি। ফলে ইচ্ছা করলেও সেতুতে দ্রুত গাড়ি পারাপার সম্ভব না হওয়ায় কখনো দীর্ঘস্থায়ী আবার কখনো থেমে থেকে যানজট লেগেই আছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুর পশ্চিমপাশে সৃষ্ট হয়েছে বিশাল আকারের বেশ কয়েকটি গর্ত। সেতুর ওপরের অংশে উঠে গেছে কার্পেটিং। জয়েন্টগুলো হয়ে পড়েছে নড়বড়ে। সেতুর ৫০ মিটার দূর থেকেই কমিয়ে দিতে হচ্ছে গাড়ির গতি। এ কারণে সেতুর উভয়প্রান্তে সবসময়ই শত শত যানবাহন আটকে থাকে। কিছুক্ষণ পরপরই দুই পাশে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আর যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের ঘাম ছুটছে। গত দুই সপ্তাহ ধরেই এমন অবস্থা চললেও টনক নড়েনি সড়ক ও জনপথ বিভাগের।

বগুড়া থেকে আসা হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, নলকা সেতু ও সড়ক সংস্কার না করায় যানবাহনগুলোকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। রাস্তার এই সামান্য অংশে খারাপ অবস্থার কারণে প্রায় ২০/২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। বগুড়া থেকে ঢাকা যেতে আমাদেরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এ যেন যানজট নিত্যসঙ্গীতে পরিণত হয়েছে।

বাসচালক কাইয়ুম হোসেন, হায়দার আলী, সুপার ভাইজার রফিকুল ইসলাম, শাহেদ আলী, আকরাম হোসেন, ট্রাকের হেলপার আব্দুল জলিলসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সিরাজগঞ্জ রোড (হাটিকুমরুল গোলচত্বর) এলাকায় এলেই আতঙ্ক শুরু হয়। কতক্ষণের মধ্যে এই অংশটুকু পার হতে পারবো- সেটাই শুধু ভাবি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও যানজটমুক্ত হওয়া সম্ভব হয় না।

একাধিক পরিবহন শ্রমিক, যাত্রী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য নলকা সেতুটি একটি বিড়ম্বনার নাম। এ সেতুর ওপর সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাতে হয়। এতে সৃষ্টি হয় যানজট। কখনো যানজট তীব্র হয়ে হাটিকুমরুল-বগুড়া, হাটিকুমরুল-পাবনা ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের বিশাল অংশজুড়ে বিস্তৃত হয়।সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয় এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া আঞ্চলিক সড়কের ফুলজোড় নদীর ওপর নলকা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে আঞ্চলিক এ সড়কটি মহাসড়কে পরিণত হলেও এ সেতুটির কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হয়নি। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২৩ জেলার যানবাহন চলাচল করছে এ সেতুটি দিয়েই। ফলে সেতুটি একেবারেই জরাজীর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন, নলকা সেতুটির খুবই খারাপ অবস্থা। সেতুর দু’পাশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর ওপরও রয়েছে খানাখন্দ। এখানে এসেই গাড়ির গতি ৫/৭ কিলোমিটারে নামিয়ে দিতে হয় চালকদের। এরই ফলেই প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, নলকা সেতুকে ঘিরে গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুর পশ্চিমপাশে বিশাল আকৃতির অনেকগুলো গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক বিভাগকে বিষয়টি জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।

হাইওয়ে পুলিশের (বগুড়া অঞ্চল) পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দিন বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একটি লেনে গাড়ি ছাড়তে হয়। আর সেতুর পাশে রাস্তা খারাপের কারণে গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলে। এতে মাঝে মধ্যেই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তার ওপর ওইসব গর্তের কারণে একটি গাড়ি হেলে পড়লেই দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। রেকার দিয়ে ওই গাড়ি তুলতে তুলতে উভয়পাশে ব্যাপক যানজট লেগে যায়। এ অবস্থার কারণে পুলিশ ২৪ ঘণ্টাই সেখানে কাজ করছে। সেতু ও সেতুর পাশের রাস্তা দ্রুত সংস্কারের দাবি করেন তিনি।

সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, সেতুর পশ্চিমাংশে বেশ কিছু গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো তুলে কার্পেটিং করতে হবে। বৃষ্টির কারণে এখন কাজগুলো করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলেই দ্রুত কার্পেটিং করা হবে। কার্পেটি শেষ হলেই যানজটও কমে যাবে।