তুমি এত মোটা কেন

75

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ খুব ইচ্ছে করে নিজের মনের কিছু কথামালাকে গুছিয়ে লিখতে। নিজের জীবনের কিছু টুকরো আনন্দ, কষ্ট বা নিছক কিছু মনের কথা। আজকে লিখছি আমার জীবনের প্রতি মূহুর্তে শুনে আসা একটা বাক্য , মোটা শব্দটা। প্রচুর বডি শেমিং এ নাজেহাল হতে হয়েছে। আমার বাচ্চা কনসিভ না হওয়ার কারণ কেও অনেকেই বলেছে মোটার জন্য। অথচ কোন আইভিএভ বা আইউআই ছাড়াই ৯০কেজির আমি সেই সময় কনসিভ করি। আলহামদুলিল্লাহ আমার মরহুম স্বামী মুগদা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক, কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফ আকন্জি রনি আমার মোটা নিয়ে কোন আক্ষেপ ছিলনা। কিন্তু সবার প্রচন্ড টেনশন আমার মোটা নিয়ে। পৃথিবীর কোন মেয়ে না চায় তাকে সবচেয়ে সুন্দর লাগুক। একজন মোটা মেয়ের যে কি পরিমান বডি সেমিং এর শিকার হতে হয় আমাদের দেশে তা ভুক্তভোগী জানে।স্কুল কলেজ ভার্সিটি নিজ পরিবারে বন্ধুবান্ধব কলিগ পাড়াপ্রতিবেশি কেউ যে বাদ নেই। তোমার গুনের মাপকাঠি তোমার ফিগার গায়ের রং বাকি সব ফাউ। তুমি কি বিয়ের পর মোটা, তুমি কি তিন বেলা ভাত খাও, সারাদিন ঘুমাও, বসে থাকো, হাটো না কেন কেনো এত মোটা এই কাপড়ে আরো মোটা লাগছে কতকি।অনেক স্লিম ফিগারের মেয়ে কে প্লেট ভরে খাবার খেতে দেখেছি। রাজশাহীতে জন্ম আমার । আমরা তিনভাই-বোন, আমরা যমজ দুই বোন আমাদের একটা বড় ভাই। ক্লাস সিক্স র্পযন্ত রাজশাহী পি এন স্কুলে পড়ালখো করেছি তারপর ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এবং কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করে কমউিনিটি বেইজড মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছি। এরপর এমফিল পাস করেছি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বায়ো কেমিস্ট্রিতে। সর্বশেষ বারডেম জেনারেল হাসপাতালের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কমরত ছিলাম । বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী । আমার আব্বু আইবিএ থেকে ঢাকা ইউনিভাসিটি এমবিএ করেছিলন। আমার আম্মু একজন গৃহিণী। আমার আব্বু একজন মুক্তিযোদ্ধা ১১নম্বর সেক্টরে কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন, উনার নামে ছিল আকন্জি কোম্পানি । উনি র্সবপ্রথম বিরিশিরি তে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করনে । ছোট বেলা থেকেই আমার স্বাস্থ্য ভালো বিধায় আম্মু আমাকে ছয় সাত বছর বয়সে নাচের স্কুলে ভর্তি করে দেন। ছোট বেলায় দুপুরে ঘুমানো বারন ছিল। যখন ক্লাস নাইনে পড়াশোনার চাপের জন্য এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করে আব্বু আমার নাচ বন্ধ করে দেন। ততদিনে আমি নাচকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। ভরতনাট্যম কথক দুটোই শিখেছি বাংলাদেশের স্বনামধন্য নৃত্য শিল্পী সোমা মমতাজ এবং সাজু আহমেদ এর কাছে। খুব ইচ্ছে ছিল আমিও সোমা আপার মত নাচে পিএইচডি করব। হয়নি আর।নাচ ছাড়ায় আরো মোটা হয়ে পরি। আমার বিয়ের যখন কথা হচ্ছে কোন এক আত্মীয় আমার মরহুম স্বামী কে বলেছিল মেয়ে তো মোটা তোমার কি সত্যি পছন্দ? আমার শাশুড়িকে আমার এক আত্মীয় প্রশ্ন করতো মিশু কি আগের চেয়ে আরো বেশি মোটা হয়েছে?কি অদ্ভুত আমাদের মন মানসিকতা। আমার মোটার কাছে যেন আমার ডিগ্রি কেরিয়ার বৃথা। মেডিক্যাল কলেজে আমার কিছু ক্লাসমেট ছিল অন্যকে মোটা খাটো বলে হেয় করে হয়তোবা পৈচাশিক আনন্দ পেত। এখনো পায় কিনা বা কোন বিশ্বসুন্দরী কে পেয়েছে নিজ জীবনে। এখন আমি যেই দেশে আছি হয়তোবা এখানে সবকিছু ভালো না তবুও একটা জিনিস ভালো কখনো মোটা শুকনো খাটো লম্বা নিয়ে জাবর কাটে না। আমার দেশের মানুষ অনেক আধুনিক এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু বেশি আধুনিক কিন্তু অন্যের স্থূলতা বা বন্ধ্যাত্ব নিয়ে চিন্তা করতে বেশ আনন্দ পায়।

ফারজানা আকন্জি মিশু বারডেম জেনারেল হাসপাতালের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী