বকশিগঞ্জের খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ

23

রোকনুজ্জামান সবুজ জামালপুরঃ জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠনে একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির সদস্য নির্বাচনের জন্য প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ,ভোটার তালিকা তৈরি এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না করেই কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণাঙ্গ পর্ষদ গঠনে অনিয়ম করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তা অনুমোদন করে নিয়েছেন। পরিচালনা পর্ষদে বিদ্যুৎসাহী প্রতিনিধি, দাতা প্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি ও শিক্ষক প্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রেও নেওয়া হয়েছে অনিয়মের আশ্রয়। এ অবস্থায় ময়মনসিংহ বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর পক্ষে পৃথক আবেদন দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠনে অনিয়ম বন্ধ করে সঠিক নিয়মে নতুন পর্ষদ গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। অভিযোগে জানা যায়, খাতেমুন মঈন ডিগ্রি কলেজে ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করার নিয়ম। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরে পুনাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ গঠন না করে আহবায়ক কমিটি দিয়ে চলে আসে কলেজের কার্যক্রম। বিগত পরিচালনা পর্ষদে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ছিলেন জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ) আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ। সরকারী বিধি মোতাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ বাদ পড়েন। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের কাউকে সদস্য না রেখেই আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ গঠন করার নিয়ম থাকলেও তা না করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ৯ অক্টোবর ২০২৩ সালে কমিটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। এর আগেই সেই কমিটিতে নিহারুন নাহার বিলকিসকে সভাপতি এবং আমিনুল ইসলামকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা সুলতানা ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত একটি পত্র অধ্যক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলে জানা গেছে, খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের ১৬ সদস্য বিশিষ্ঠ পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ গত ২ জুলাই’২০২০ সালে শেষ হয়েছে। এরপর আহবায়ক কমিটিতে নিহারুন নাহার বিলকিস আহবায়ক এবং অধ্যক্ষ বজলুল করিম তালুকদার সদস্য সচিব থেকেই চলে কলেজের কার্যত্রম। কলেজের অধ্যক্ষ বজলুল করিম তালুকদার কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে খাতা কলমে নির্বাচন পরিচালনার কমিটি গঠন, প্রিজাইডিং অথবা রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, অভিভাবক প্রতিনিধি, ভোটার তালিকা তৈরি, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা দেখিয়ে গোপনে নিজের ইচ্ছেমতো তার নিজস্ব আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে তা অনুমোদন করিয়েছেন। এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হলে অনুমোদনকৃত কমিটির নামের তালিকা গোপন রাখেন তিনি। এ ছাড়াও একজন ব্যাক্তি কমিটিতে একাধারে দুই বারের বেশি থাকার নিয়ম নেই। অথচ এ পর্ষদে অনেকেই একাধিকবার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান বলেও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, নিহারুন নাহার বিলকিস এই কলেজের একসময় শিক্ষক ছিলেন। তাকে কিভাবে সভাপতি করা হলো এ নিয়ে কলেজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, অধ্যক্ষ সকল প্রকার নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাংগুলী দেখিয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করে নিজের ইচ্ছেরমতো আপন মামাকে বিদ্যুৎসাহী প্রতিনিধি, দুই বছর যাবত অসুস্থ একজন শিক্ষক এবং সভাপতি নিহারুন নাহার বিলকিস এর ভাইকে শিক্ষক প্রতিনিধি করা হয়েছে। তিনজন অভিভাবক প্রতিনিধি তারা নিজেরাও জানেন না তাদের ওই কমিটিতে অভিভাবক প্রতিনিধি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের একজন দাতা প্রতিনিধি পরিচালনা পর্ষদে থাকার কথা থাকলেও তা না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে দাতা প্রতিনিধি হিসেবে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ অধ্যক্ষের বড় ভাই কায় খসরু তালুকদারকে। দাতা প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে কলেজে জমি কিংবা এককালীন অর্থ প্রদান করতে হয়। কিন্তু কলেজে কোন জমি কিংবা অর্থ দিয়েছেন বলে দলিল প্রমাণ নেই। এছাড়াও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং সদস্য সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা হওয়ার কথা কিন্তু সদস্য সচিবের একক স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হয়ে আসছে। তিন মাস পর পর পরিচালনা পর্ষদের সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয় না বলে জানা যায়। এ অবস্থায় কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক, সাবেক ছাত্রী ও এলাকার বিশিষ্টজনেরা উপজেলার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সকল অনিয়ম-স্বজনপ্রীতি বন্ধ করে কলেজের প্রায় এক হাজার ২’শ শিক্ষার্থীর স্বার্থে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা শাকের সুমন ও ছাত্রীর অভিভাবক নূর শাহিনসহ কয়েকজন বলেন, কলেজের নতুন কমিটি গঠন হয়েছে তারা কিছুই জানেন না। অধ্যক্ষ শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের কাউকে কিছু জানায়নি। কোনো নোটিশও করেনি। কয়েকজন শিক্ষার্থীও জানালেন একই কথা। গত পরিচালনা পর্ষদ থেকে বাদ যাওয়া দাতা সদস্য মোফাখ্খার হোসেন খোকন বলেন, নির্বাচন না করেই প্রতিষ্ঠানের দাতা প্রতিনিধিসহ অন্যান্য প্রতিনিধি করা হয়েছে। অধ্যক্ষ যা নিজের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ। কলেজের অধ্যক্ষ বজলুল করিম তালুকদার বলেন, এ যাবত আমরা কোনো সময় নির্বাচন করি নাই। কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও এমপি মহোদয়ের সর্বসম্মতিক্রমে কমিটি গঠন করা হয়। তবে খাতা কলমে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এটা নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, নিয়ম না থাকলেও এটাই নিয়ম, এ ভাবেই করা হয়। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নিহারুন নাহার বিলকিস বলেন, পরিচালনা পর্ষদ গঠন প্রক্রিয়ার নিয়ম কি তা আমি কিছু বলতে পারছিনা তবে অধ্যক্ষ সাহেব বিস্তারিত বলতে পারবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহনা জিন্নাত বলেন, এ বিষয়ে অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টা দেখবো।