আতঙ্কে দিন কাটছে এসএসসি পরীক্ষার্থীর মারধরের মামলা থেকে বাঁচতে পাল্টা ‘মিথ্যা’ মামলায় হয়রানি

16

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে হামলা ও মারধরের মামলা থেকে বাঁচতে পাল্টা ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রসহ পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পিবিআইতে তদন্তাধীন ওই মিথ্যা মামলায় আটক কিংবা গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিন কাটছে শাহাদাত হোসেন নামে ওই এসএসসি পরীক্ষার্থীর। মামলায় হয়রানিসহ প্রতিপক্ষের বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকিতে দিশেহারা পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ অবস্থায় ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির দাবিসহ ‘মিথ্যা’ মামলা থেকে মুক্তি চান স্কুলছাত্র শাহাদাতের পরিবার। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কড়ইতলা বাজারে একটি পত্রিকার স্থানীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তাঁরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলার চরঠিকা এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে শাহাদাত হোসেনসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, চলতি বছর স্থানীয় ফজু মিয়ারহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষা শুরুর আগে গেল ১৮ জানুয়ারি বিকেলে প্রতিবেশী মো. রাব্বীর সঙ্গে বাড়ির পাশে একটি মাঠে ক্রিকেট খেলতে যায় সে। এসময় খেলার মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এখবর পেয়ে রাব্বির মামা রবিউলসহ লোকজন গিয়ে তাঁকে (শাহাদাতকে) বেধড়ক মারধর করে গুরুতর জখম করেন। এতে গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলে ২২ জানুয়ারি তাঁর চাচা নুরুল আমিন পাঁচজনকে আসামি করে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। বিচারক ওই মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। এদিকে এ খবরে আসামিরা মামলা থেকে বাঁচতে ঘটনার ২০ দিন পর (৮ ফেব্রুয়ারি) একই আদালতে নুরুল আমিনকে প্রধান এবং শাহাদাতকে দুই নম্বর আসামি করে সাতজনের নামে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। রাব্বীর নানী শেফালী বেগমের দায়ের করা ওই মামলাটি আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, নোয়াখালী অঞ্চল তদন্ত করছেন। শাহাদাতসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাঁদের মামলা থেকে বাঁচতে রাব্বীর পরিবার পাল্টা যে মামলাটি করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। শাহাদাতের চাচা নুরুল আমিন লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে এবং বাবা আবুল কাশেম চাকুরী সূত্রে ঢাকায় অবস্থান করে আসছেন। যে কারণে, ঘটনার সময় তাঁদের কেউই উপস্থিত না থাকলেও মামলায় তাঁদেরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা জানান, রাব্বীর মামা নোয়াখালী জেলা পুলিশের সদস্য। সেই সুবাধে প্রভাব খাটিয়ে এ মামলায় হয়রানিসহ আসামিদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। তাই মামলা দু’টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিসহ হয়রানিমূলক পাল্টা মামলাটি থেকে অব্যাহতি চান তাঁরা। সংবাদ সম্মেলনে এসএসসি পরীক্ষার্থী শাহাদাত ছাড়াও তাঁর চাচা নুরুল আমিন, দাদী আমেনা বেগম ও ফুফু বিবি আয়েশাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে পাল্টা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. রাব্বীর মামা রবিউল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় রাব্বীও আহত হয়ে স্থানীয় এবটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। ঘটনার পর তাঁরা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তা আমলে না নিয়ে শাহাদাতের চাচা আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। যে কারণে, উপায় না পেয়ে পরবর্তীতে তাঁরা পাল্টা মামলাটি দায়ের করেছেন। এদিকে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র উপপরিদর্শক মো. সজিব জানান, তদন্তকার্যে কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রকৃত ঘটনার আলোকেই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।